শাহনাজ বলছেঃতুমি না খেললেও আমি খেলব।
আমি বললাম বাহবা...ঝাল আছে দেখছি। তা বাজিটা কিসের আগে জেনে নেই!!!তোমার তো জানা থাকার কথা। চুপ করে বসে আছ কেন?বলো,বাজিটা কিসের?
শাহনাজ কাওছারকে ডেকে জিজ্ঞেস করছে,বাজিটা কিসের?
কাওছার বলছে,এই খেলায় যারা জিতবে,ওরা দুইজন সব সময় পার্টনার হয়ে খেলবে।
আমি বললাম যারা হারবে?
কাওছার বলল,যারা হারবে তাদের আবার কি?
আমি দেখলাম কাওছারের বান্ধবী তার পার্টনার হয়ে খেলছে,আসলে শুধু সে না,সবাই নিজ নিজ পছন্দের মেয়েকে পার্টনার করে খেলতে চায় এবং খেলেও।আমি বেশি আমার ক্লাস মেইট এবং ভালো বন্ধু রব্বানীকে পার্টনার করে খেলতাম।আজ সে না আসাতে আমার এই অবস্থা । আমি বুঝে গেলাম এইসব কাওছার এবং শাহনাজের চালাকি,তাই বললাম যারা হারবে ওই দু’জন আর কোনদিন পার্টনার হয়ে খেলতে পারবে না। বল এতে রাজি কি না তোমরা?রাজি থাকলে এস খেলা শুরু করি। আরেকটি কথা আজ যদি তোমরা এই বাজি না খেলো তাহলে আর কোনদিন তোমাদের সাথে আমি বাজি খেলব না।
কাওছার চিন্তায় পরে গেল,শাহনাজকে ইশারা দিচ্ছে...অন্যদিকে কাওছারের বান্ধবীও এই শর্তে রাজি হচ্ছে না।
অবশেষে, সবাইকে বাজির শর্ত শুনিয়ে সাক্ষী রেখে খেলা শুরু হল।ইন্সট্রাক্টরও সাক্ষী এবং রেফারি।
কাওছার খুব সিরিয়াস হয়ে খেলছে, শাহনাজও জান প্রান দিয়ে খেলতেছে,খুব নার্ভাস এবং চেহারাটা মলিন হয়ে আছে।প্রথম গ্যাম ওরা জিতে যাওয়াতে মনে হচ্ছিল শাহনাজ কেঁদেই ফেলবে,কারণ আমাদের স্কোর ছিল মাত্র সাত। শাহনাজের মুখে কোন কথা নেই,সে বুঝতে পেরেছে আমি যে ইচ্ছা করে হারতেছি।
দ্বিতীয় গ্যাম শুরু। ওদের পয়েন্ট সাত আমাদের শূন্য। শাহনাজ পাগল হয়ে খেলতেছে,এবং এত ভালো খেলতে শাহনাজকে আমি আগে কোনদিন দেখি নাই।শাহনাজ হালকা পাতলা এবং গায়ের রঙ ফর্সা ছিল।কিন্তু আজ শাহনাজের চেহারার রঙ বদ্লে মেঘলা আকাশের মতো হয়ে গেছে।চোখে পানি টলমল করতেছে।যখন তখন বৃষ্টি নামতে পারে।
একপর্যায়ে সাটল মাটি থেকে তুলতে গিয়ে চোখে চোখ পড়ে যায়,শাহনাজ সাটল ধরতে গিয়ে আমার হাত ধরে বসে। এই দৃশ্যটা কাওছার দেখে ফেলে এবং শাহনাজকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,কি আর কর বা,শেষ বারের মতো হাতটাই ভালো করে ধরে নেও।
এই কথা শুনা মাত্রই শাহনাজ চোকের পানি চেড়ে দিল,এবং তার চোখের গরম এক ফোটা জল আমার হাতে পড়ে। তারপর আমার শরীরে কারেন্টের সকের মতো এমন কি যেন লাগল।এই এমন এক অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমি গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে শাহনাজকে বললাম পিছনে যাও। সে আমার দিকে এমন এক অবাক দৃষ্টিতে থাকিয়ে আছে,চোখের পলক ফেলছে না।আমি ধমক দিয়ে আবার বললাম পিছনে যাও।
তারপর কাওছারকে উদ্দেশ্য করে বলি, কার হাত কে ছাড়ে/ধরে খেলা শেষে বুঝা যাবে।এখনো রাকেট হাতে এবং গ্যাম অন। সো লেটস ক্যারি অন প্লেয়িং।
তারপর কীভাবে যে কী হয়েছে আমি নিজেই জানি না।বাকি যারা ছিল সবাই খেলা বন্দ করে আমাদের খেলা দেখছে। দ্বিতীয় গ্যাইমে ওদেরকে সাতে রেখেই আমরা উইন করি।
শেষ গ্যাইম শুরু। শাহনাজের আকাশের মেঘ কেটেছে,কিন্তু কাওছারের টেনশন বেরে গেছে।
শাহনাজ ৬পয়েন্ট নিয়ে আউট হয়,সাটল আমার হাতে,শাহনাজ থাকিয়ে আছে। ওদের পয়েন্ট এখনো শূন্য। শাহনাজকে একটু চিন্তিত দেখা যাচ্ছে,আমি সার্ভ করি,আর আমার সার্ভ নেটে আটকা পড়ে যাওয়াতে শাহনাজের চেহারায় বিষণ্ণতার প্রমাণ পাওয়া যাইতেছে।কাওছারের বান্ধবী খুব নার্ভাহ হয়ে সার্ভ করছে,কিন্তু তার সার্ভিস ও আটকা পড়ে নেটে।এতে শাহনাজের গলায় একটু রস এসেছে মনে হচ্ছিল।কাওছার চেঁচামেচি করছে। এবার কাওছারের পালা।কাওছার খুব ভালো খেলে। আমরা কি কাওছারকে টেকাতে পারব তা হয়ত শাহনাজ ভাবছে? কিন্তু ভাব তো ভালো না,কাওছার একাই ১১ নিয়ে নিছে।শাহনাজের আকাশ আবার মেঘে ঢাকা পড়েছে। কাওছার আমার দিকে সার্ভ করছে,
কিন্তু......একী হল,কাওছার ও আটকা পড়লো নেটে।শাহনাজ ও সার্ভ করে কোন পয়েন্ট না এনেই আউট। এতে কাওছারের গলায় একটু রস আসে।আমারও নার্ভাসি লাগছে।
শাহনাজের মলান চেহারার দিকে থাকিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করছি,আমি কী পারব না শাহনাজের বিষণ্ণতা দূর করে ওর মুখে একটু হাসি ফোটাতে?পারব না ওর আকাশের মেঘ সরিয়ে একটা সুনীল আকাশ উপহার দিতে?মেয়েটা আমার দিকে থাকিয়ে আছে,কান্না কান্না ভাব।কিন্তু কেন? এইটা তো খেলা,আর এতে হার জিত তো থাকবেই।তাহলে শাহনাজ এমন করছে কেন? সে যাই হোক, আমাকে কিন্তু এই খেলা জিততেই হবে। কাওছারের দিকে থাকিয়ে ভাবছি এবারও কি আমি নেটে আকটা পড়বো? আমি নেটে আটকা পড়লে শাহনাজের কি হবে? আমরা কি আর সুযোগ পাব? আমাদের মাত্র ৬পয়েন্ট আর ওদের ১১।
যাক,তারপর আমি সার্ভ করি এবং আমার হাতেই খেলা শেষ হয়।শাহনাজ ইয়েস,
হুররররররররররে ইউ ডান ইট... বলে খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরে......।
এই নিয়ে অনেক হাসাহাসি,বলাবলি হয়। শাহনাজ কোন রিয়াক্ট না করে আভইড করে যায়।কিন্তু আমার কষ্ট হচ্ছে এবং ভাবছি আগামি কাল শাহনাজ কি করবে?আজ শেষ ক্লাস ছিল বলে নেহা তেমন কিছু বলার সুযোগ পায় নাই।আমি জানি নেহা আগামি কাল ক্লাসে ঢুকেই শাহনাজের পিছনে লেগে যাবে।নেহা খুব জগড়াটে এবং বাজে স্বভাবের একটা মেয়ে।সব সময় পরচর্চা আর খোঁচাখুঁচিতেই ব্যস্ত থাকে।আমাকে নেহা সহ্য করতে পারেনা।একদিন নেহা আমার দিকে বন্ধুত্বের হাত বারিয়ে বলেছিল, লেটস বি ফ্রেন্ড। আমি তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলাম,আমি মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব করিন না,বিশেষ করে তোমার টাইপের মেয়েদের সাথে তো কখনো না। ঊত্তরে নেহা বলেছিল আমার টাইপের বলতে কি বুঝাতে চাও আর তোমার টাইপের মেয়েরাই বা কেমন হয় বল একটু শুনি?
আমিঃ তুমি জেনেই বা কি করবে,তুমি তো আর ওদের মতো হতে পারবে না।তুমি নিজেকে বাংগালী বলেই মনে কর না, আর বাঙ্গাগালী কালচারের মেয়েদের তো তুমি সহ্যই করতে পার না।বিশেষ করে শাহনাজ এবং স্কার্ফ পড়া মেয়েদের।
নেহাঃ ও...বুঝতে পেরেছি,তোমার শাহনাজ টাইপের মেয়ে পছন্দ,আমার জায়গায় শাহনাজ প্রস্তাব দিলে তুমি নিশ্চয়ই গ্রহন করতে।কী ঠিক বলছি না? তো এতই যখন পছন্দ ওকে সরাসরি বললেই পার। তুমি চাইলে আমি হেল্প করতে পারি...
আমিঃ ধন্যবাদ।তার আর প্রয়োজন হবে না।তোমার জায়গায় শাহনাজ হলেও আমার সিদ্ধান্ত পালটাতো না।কারণ আমি বলেছি মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব করি না।তোমার মতে কি শাহনাজ মেয়েদের কাতারে পরে না?
নেহাঃ মেয়েদের তুমি এত ভয় পাও কেন? বড় ধরনের ছ্যাকা খাইছো নাকি?
তবে তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে,কারণ আজ পর্যন্ত আমাকে কোন ছেলে সরাসরি এই ধরনের কথা বলার বা আমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার সৎ সাহস পায় নি।তুমি হইলা প্রথম ছেলে,যে অপ্রিয় হলেও আজ এই কঠিন সত্য কথা গুলা বলতে একটুও দ্বিধাবোধ করো নি।
আমিঃ এখনও খাইছি না,তয় ছ্যাকা খাওয়া থেকে বাচতে চাই তাই।আর সত্য কথা বলতে দ্বিধাবোধ করার কি আছে। ওরা সুন্দরের পূজারী,ওরা তোমার বাইরের রুপটাই শুধু দেখেছে, আমি দেখেছি ভিতরেরটা।মানুষের মন সুন্দর তো সব সুন্দর।
নেহাঃবাহবা... কিন্তু...যারা এইসব ভয় পায় ওদের জন্যই বেশির ভাগ এইসব থাকে।কিন্তু বন্ধুত্ব আর ভালবাসা কি এক জিনিস?
আমিঃ মেয়েদের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কই কিছুদিন পর ভালবাসায় বদলে যায়।
নেহাঃতাতে অসুবিধাটা কোথায় ?আর প্রেম না করেই এতো অভিজ্ঞতা!!!হুম...
আমিঃআমি শুনেছি প্রেমে ব্যার্থ হলে নাকি মানুষ খুব কষ্ট পায়।কেউ কেউ বিরহানলে পুড়ে কাতর হয়ে এক জিয়ন্ত লাশ হয়ে বেচে থাকে।না পাওয়ার বেদনা মানুষকে তিলেতিলে মারে।কেউ কেউ আবার আউলা-বাউলা হয়ে একতারা হাতে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে।
নেহাঃ আরে বাহ...ওনেক কিছুই জান দেখছি?কিন্তু তারপরও তো মানুষ ভালবাসে সৌরভ!!! আর প্রেম ভালবাসা তো এইসব যুক্তি মানে না।প্রেম ভালবাসা তার নিজস্ব গতিতে চলে।প্লান করে ভালবাসা হয় না।ইনফাক্ট প্রেম করা যায় না,হয়ে যায়।আর কখন কার সাথে কার ভাব হয়ে যায়,ভালো লাগা থেকে ভালবাস হয়ে দুই মন মিলে যায় কেউ বলতে পারবে না।আর সত্যি বলতে কি জান সৌরভ......নিজের অজান্তে কখন যে হৃদরের গভীরে,মনের কুটিরে তুমি স্থান করে নিয়েছ টের-ই- পাই নাই।মন মন্দিরে তোমাকে বসিয়ে দিবস রজনী আমি তোমারী পূজা করি।তোমাকে নিয়ে নানানরঙ্গের স্বপ্ন দেখি। কিন্তু......
আমিঃ কিন্তু কি?
নেহাঃ কিন্তু কি? তা কী এখনো তোমার বুঝার বাকি রয়েছে সৌরভ?তবে নট টু ওয়ারি,জোর জবরদস্তি করে প্রেম ভালবাসা আদায় করা যায় না।মনে মনে মন না মিলিলে,ভালবাসা যায় না। ইটস অকে।
আমিঃ সরি নেহা,আমি জানতাম না তুমি আমাকে এতটা ভালবাসো। তুমি আমার খেয়াল মন থেকে মুছে ফেলে নতুন করে......
নেহাঃ ইটস অকে সৌরভ,ডোন্ট ওয়ারী...
নেহাঃ তোর এতো দরদ লাগে কেন? তুই তো ঝুলেই আছিস পান্নার গলায়,ঝোলে থাক।
কাওছারঃ তোর কি ইচ্ছা আমি তোর গলায় বানরের মতো ঝুলি? আমি তো তোর মাঝে জ্বলার গন্ধ পাচ্ছি!!!তুই সৌরভের গলায় ঝুলতে পারছিস নাবলে জ্বলন হচ্ছে।
নেহাঃ কে আমি!!!হাহাহা...আমার জ্বলন হচ্ছে তাও সৌরভের গলায় ঝো্লার জন্য!!!তুই কি মনে করিস আমার রুচি শাহনাজের মতো?
কাওছারঃ হাহাহাহা...হাসাইলি রে নেহা হাসাইলি। কই বেদাগ পূর্ণিমার চাঁদ আর কই পুড়া রুটি। কিসের মাঝে কি আর পান্তা ভাতে ঘি!!!
শাহনাজঃ কই যাচ্ছি তাতে তোমার কি? হাত ছাড়ো কাপুরুষ কোথাকার।
আমি বললাম যদি হাত না ছাড়ি, কি করবা? শাহনাজ উত্তরে বলে,কি করমু দেখবা.........।
No comments:
Post a Comment