Thursday, May 13, 2010

SHOUROBER KOSHTO

আমি সৌরভ,

জন্ম বাংলাদেশে,বড় হয়েছি ইংল্যান্ডে

ছো বেলা থেকেই খুব চঞ্চল স্বভাবের এবং জেদি ছিলাম,দুষ্টুমির সীমা ছিল নাখুব সাহসীও ছিলাম,কিন্তু আমি সাপ খুব ভয় পেতাম এবং এখনো পাইআরেকটা মজার ব্যাপার হল আমি ইঞ্জেকশন,ট্যাবলেট,ক্যাপসুল ইত্যাদিকে ও সাপের মতো ভয় পেতাম এবং এখনো পাইকিন্তু কথায় আছে না, যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয়আমার বেলাও তাই হলআমাদের পাশের বাড়ির বশির ছিল গ্যাস্ট্রিক আলচার রোগি,রাত ব্যথা ওঠলে বশির চিৎকার করে কাঁদিতআমি একদিন মাকে জিজ্ঞেস করি মা, বশির চিৎকার করে কাঁদছে কেন? মা বললেন ওর খুব কষ্ট হচ্ছে, গ্যাস্ট্রিকের বেদনা সহ্য করতে পারছে না তাই চিৎকার করে কাঁদছেআমি বললাম ওকি আমার মতো ঔষধ ভয় পায়? মা বলেন সে তোমার মতো ভিতু না,সে নিয়মিত ঔষধ খায়আমি বলি,মাতুমি না বল ঔষধ খেলে রোগ থাকে না!!! তাই আমাকে জোড় করে ঔষধ খাওয়াও আর আমি সুস্থ হয়ে যাইকিন্তু মাবশিরের কমছে না কেন? হো... আমি জানি কেন? ওর মা নেই তো তাইমায়ের হাতে ঔষধ খেলে রোগ থাকে না,ঠিক না মা? কিন্তু আমার বশিরের জন্য কষ্ট হয় মাতুমি একটা কিছু কর না যাতে ওর ব্যথা চলে যায়মা বললেন দোয়া করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই বাবা,আমি দোয়া করি আল্লাহ যেন বশির কে মাফ করেনরাত অনেক হয়েছে বাবা তুমি এখন ঘুমাওআমি বলি মা,আমার জন্য ও দোয়া কর,আল্লাহ যেন আমাকে বশিরের মতো রোগ না দেনমা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেন, মা সন্তানের জন্য সব সময় দোয়া করে বাবামাকে বলতে হয় নাএবার তুমি ভালো ছেলের মতো ঘুমিয়ে পড় বাবাতারপর আমি ঘুমিয়ে পড়ি ঘুমের ঘুরে আমি মা মা বলে ডাকছি শুনে মা আমাকে বুকে জড়িয়ে বলেন কি হয়েছে বাবা? আমি বলি,মা বশির...বশির মরে গেছে মা, বশির মরে গেছেমা আমাকে বলে তুই দুঃস্বপ্ন দেখেছিস বাবাবশিরের কিছুই হয় নাইতুই ঘুমাআমি আবার ঘুম'তে চেষ্টা করি, কিন্তু বশিরকে আমি চোখ থেকে সরাতে পারছি নাকিছুক্ষণ পর আবার আমার কানে কান্নার আওয়াজ আসে,আমি মাকে ডেকে বলি,মা তুমি কান্নার আওয়ার শুনতে পাচ্ছ? ওঠ মা, আমার মনে হয় বশির মারা গেছে তাই ওর পরিবারের সবাই কাঁদছেমা বলেন,আচ্ছা তুই ঘুমা বাবা,আমাকে খবর নিয়ে আসিতারপর খবর নিয়ে জানা যায় বশির আমাদের মাঝে আর নেইতখন থেকে গ্যাস্ট্রিক আলচার শুনলেই ভয় পেতাম,মনে করতাম গ্যাস্ট্রিক আলচার হলেই মানুষ মারা যায়তাই সব সময় প্রার্থনা করতাম,খোদা কাউকে গ্যাস্ট্রিক -আলচার বা বেদনা রোগ দিওনা

ইংল্যান্ড যাবার পর...

কিন্তু, আমি নিজেই এই রোগে অনেকদিন ভুগেছি এবং আমাকে অনেক ট্যাবলেট ক্যাপসুলও খেতে হয়েছে তারপর আল্লাহ আমাকে মাফ করেছেনতখন থেকে আমার মন থেকে গ্যাস্ট্রিক আলচারের ভয় চলে যায়আসলে এইসব কিছুই না,যার মরণ যেভাবে লেখা হয়েছে তাকে সেভাবেই মরতে হয়,এইসব উছিলা মাত্রআমি অনেক ক্যান্সার রোগিকেও দীর্ঘদিন বেচে থাকতে দেখেছি,আবার সুস্থ সবল মানুষকেও কম বয়সে এই পৃথিবী থেকে চলে যেতে দেখেছি

আমি আবার একটু লাজুক স্বভাবেরও ছিলাম,স্কুল কলেজে মেয়েদের সাথে বেশ মিশতাম না,নিজেকে সব সময় আলগে রাখতামএই নিয়ে বন্ধু বান্ধব অনেক সময় হাসা হাসি করত,কিন্তু আমি মুচকি হাসি দিয়ে এড়িয়ে যেতামআমি খেলাধুলার মাঝে ব্যাডমিন্টন,ফুটবল আর সুউমিং খুব পছন্দ করতাম এবং গ্রুপের মাঝে হিসাবের একজন ছিলামকিন্তু কনখো মেয়েদের পার্টনার করতাম নাএকবার ওরা সব মিলে ফন্দি করলো যে পি,, ক্লাসে শাহনাজ নামের মেয়েকে আমার পার্টনার বানাবেআর এতে শাহনাজের আগ্রহ ছিল বেশিকারণ সে মনে মনে আমাকে পছন্দ করত,ক্লাসে সব সময়ই আমার পাশের ডেস্কে বসার চেষ্টা করত,কিন্তু আমি সুযোগ দিতাম নাস্কুলের সব মেয়েদের মাঝে শাহনাজ ছিল ভিন্নখুব গম্ভীর স্বভাবের শান্তশিষ্ট,অদ্ভুত একটা মেয়েসে ও ছেলেদের সাথে মিশতে পছন্দ করত নানিজেকে সব ধরনের বাজে আড্ডা থেকে দূরে রাখত আর কথা খুব কম বলতকিন্তু যখন বলত,মুখ থেকে আগুনের গোলা বের হততাই আজেবাজে ছেলে মেয়েরা ওকে ভয় পেত এবং মিস বারুদ বলে ডাকাতো

অবশেষে একদিন পি,ই ক্লাসে শাহনাজ ব্যাডমিন্টনে আমার পার্টনার হওয়ার সুযোগ পেয়ে গেলআমি চ্যাঞ্জিং রুমে থাকতেই ওরা সব তাড়াতাড়ি করে ব্যাডমিন্টন কোর্টে চলে এসে নিজ নিজ পার্টনার বেছে নিয়ে খেলা শুরু করে দিছে

আমি গিয়ে দেখি এক কোর্টে নেটের এক সাইডে শাহনাজ আর অপর সাইডে তার দুই বান্ধবী কি যেন বলাবলি করছে আমাকে দেখেই ওরা চুপ হয়ে যায় এবং একজন বলে ওঠে, এইতো পেয়ে গেছি শাহনাজ তোর পার্টনারচল খেলা শুরু করিআমি চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখলাম আর কোন কোর্ট খালি নেই,এবং আমি যদি এখন ওদের সাথে না খেলি এতে ওরা অপমান বোধ করতে পারেতাই শাহনাজ এর পার্টনার হয়ে খেলা শুরু করিকিন্তু শাহনাজ এমন ভাব করছিল যেন সে জীবনে প্রথম বার রাকেট হাতে নিয়েছেএইসব-ই- যে পরিকল্পিত আমি বুঝতে পেরেছিলাম,কিন্তু শাহনাজ এমন করছে কেন বুঝতে পারছি না!!! ও তো মোটামুটি ভালই খেলেঅপর সাইড থেকে ওর বান্ধবিরা বলছে সৌরভ শাহনাজকে একটু শিখিয়ে দেওনা......

আর অন্যদিকে আমার বন্ধু কাওছার আহমেদ পাশের কোর্ট থেকে মুচকি হাসি দিচ্ছেন,আর বলছে,সৌরভ বাজি খেলবে আজ??? আমি বলার আগেই শাহনাজ বলে দিচ্ছে হ্যাঁ, খেলব

আমি শাহনাজকে বলি,তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে? নিজে রাকেট ধরতে জান না, বাজি খেলবে......

শাহনাজ বলছে তোমার লজ্জা করেন না, একজন তোমাকে চ্যালেঞ্জ করছে আর তুমি পিঠ দেখিয়ে পালাচ্ছ,ভিতু...

No comments:

Post a Comment