কিন্তু কিভাবে,কোথা থেকে শুরু করব? যদি শাহনাজ মাইন্ড করে!!
তারপর বুকে সাহস রেখে আমি শাহনাজকে বলি, তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তোমার মনে খুব কষ্ট। মাইন্ড না করলে আমার জানতে খুব ইচ্ছে করছে তোমার কষ্টের কথা,তুমি আমাদেরকে তোমার বন্ধু ভেবে থাকলে তোমার কষ্ট আমাদের সাথে শেয়ার করতে পার।
উত্তরে শাহনাজ বলছে... কষ্ট! কিসের কষ্ট? আমার কোন কষ্ট নেই, আর থাকলেও সেয়ার করতাম না। আমি কষ্ট শেয়ার করে আমার সাথে কাউকে দুঃখী করতে চাইব না।
আমিঃ আচ্ছা বাবা তোর সাথে পারাযাবে না। ঠিক আছে কষ্ট নাইবা শেয়ার করলে,কি ভালো লাগে না লাগে তা তো বলতে পারিস! নাকি তাতেও অসুবিধা আছে?
শাহনাজঃ তুমি এত কৌতূহলী কেন? কৌতূহল থাকা ভালো, কিন্তু বেশী থাকা ভালো না। মানুষের জীবনের কিছু অধ্যায় থাকে যা গোপন থাকাই ভালো।
আমিঃ এতে কৌতূহলের কি আছে, এক বন্ধু কি আরেক বন্ধুর ভালো লাগা মন্দ লাগা সম্পর্কের কথা জানতে পারে না?
শাহনাজঃ পারে, পারবে না কেন! কিন্তু...
আমিঃ কিন্তু কি?
শাহনাজঃ না, থাক, কিছু না।
পান্নাঃ তুই এত ভূমিকা টানছিস কেন? তুই কী ভূমিকা ছাড়া কোন কথা বলতে পারিস না? তোকে বলতে হবে আজ...
শাহনাজঃ কি বলব! মানুষের সব চাওয়া কি পাওয়া হয়? ঠিক আছে এতই যখন ইচ্ছা শোনার তাহলে শোন... (শাহনাজ আকাশের দিকে থাকিয়ে বলছে )
আমারও তোদের মতো...
ভালো লাগে নিজের মত করে বেচে থাকতে,
ভালো লাগে অজানা পথে উদ্দেশ্যহীন হাঁটতে।
ভালো লাগে সুনীল আকাশ আর ডুবো-ডুবো বেলা,
ভালো লাগে যুদ্ধ যুদ্ধ আর লুকোচুরি খেলা।
ভালো লাগে হাসি মজা,
ভালো লাগে বৃষ্টিতে ভেজা।
ভালো লাগে পূর্ণিমা শশী,
ভালো লাগে...ভালো লাগে...
পান্নাঃ কি হয়েছে থেমে গেলে কেন? বল...
শাহনাজঃ আমার দিকে থাকিয়ে বলছে... না, আর কিছু না।
তার পর আমি শাহনাজের দিকে থাকিয়ে বললাম...
ভালো লাগে পূর্ণিমা শশী,
ভালো লাগে ভালো লাগা মানুষের মুখের হাসি।
ভালো লাগে ওর মুখের কথা,
ইচ্ছে করে জানতে ওর না বলা কথা।
তারপর শাহনাজ প্রসঙ্গ পাল্টাবার চেষ্টা করাতে আমরা ওকে আবারো ইন্সিস্ট করলাম, তারপর শাহনাজ...
শোন, তোমাদের মত আমি মুক্ত না, আমি একটি বন্দি পাখীর মত।আজকের দিনটা আমার জীবনের সব চাইতে আনন্দের এবং স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে।আমি শুক্র বারে তোমাদের সাতে আমার জীবনের কিছু কঠিন সত্য সেয়ার করব। এইসব কথা বলে আমি আজকের দি্নের আনন্দ আর মজা নষ্ট করতে চাই না।
তারপর আমরা কথা বলতে বলতে শাহনাজকে বাসায় পৌছে দিতে যাই,আমরা একটু দূরে দাড়িয়ে রইলাম, পান্না শাহনাজকে দরজার সামনে পৌছে আসার পর আমরা নিজ নিজ বাসায় চলে যাই।
পরদিন আমি শারীরিক অসুস্থতার কারনে স্কুলে যেতে পারি নাই। কাওছার রাত্রে আমাকে ফোন করে জানায় যে শাহনাজ আমার জন্য ওর কাছে একটা চিঠি দিয়ে গেছে। কাওছার ছিল আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ওর সাথে আমি সব কিছুই শেয়ার করতাম।
আমি থাকে বললাম চিঠি খুলে পড়ে আমাকে শোনানোর জন্য। সে পকেটে হাত দিয়ে বলে তুই একটু লাইনে থাক, কিছুক্ষণ পর এসে গলা শুকিয়ে বলে...
তুই রাগ করিস না, আমার মনে হয় চিঠিটা হারিয়ে ফেলেছি। শাহনাজ আমাকে চিঠিটা প্লেগ্রাউন্ডে দিয়েছিল আর আমি তাড়াহুড়ো করে সার্টের পকেটে রেখেছিলাম,হয়ত; ফুটবল খেলার সময় পরে গেছে। তুই চিন্তা করিস না,কাল সকালে গিয়ে আমি সারা প্লেগ্রাউন্ড খুজে চিঠিটা তুই স্কুলে পৌছার আগেই বের করে রাখব।
উত্তরে আমি বললাম তাই যেন হয়। না হয় তোর কপালে কষ্ট আছে জেনে রাখিস।
কাওছারঃ জানি, জানি তুই কি করবে। দোয়া কর আজ রাতে যেন বৃষ্টি না হয়।
আমিঃ আবে শালা দিলে তো আরেকটা চিন্তা মাথায় ডুকাই।
যেটার ভয় ছিল সেটাই হল, মধ্য রাত্রে প্রচণ্ড রকমের ঝড়-বৃষ্টি শুরু হল। আমি শুয়ে শুয়ে ভাবছি ফোন করে কাওছারকে বকা দেব।ঠিক এই সময় ক্রিং ক্রিং ফোনের ঘন্টি ভেজে ওঠে।আমি নিশ্চিত ছিলাম এইটা কাওছারের ফোন।
রিসিভার তুলেই বকা শুরু করলাম। তারপর রাত কাটে অনেক কষ্টে।সকালে উঠে কাওছার আর আমি অনেক খুজাখুজির পরও না পাওয়াতে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।কাওছার বার বার সরি বলতেছে, আর আমি অপেক্ষায় আছি কবে শাহনাজ আসবে আর ওর কাছ থেকে চিঠির ব্যাপারে জানব। কিন্তু সময় যেন থেমে গেছে,ঘন ঘন ঘড়ি দেখতেছি,মনে হচ্ছে ঘড়ির কাটা বন্ধ হয়ে আছে।এই ভাবেই কেটে যায় সারাটা দিন কিন্তু শাহনাজের দেখা আর পেলাম না।সে আজ স্কুলেই আসে নাই। এতে আমার টেনশন আরো বেরে গেলে।অনেক ধরনের নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা মাথায় আসে, আবার নিজেই নিজেকে শান্তনা দেই এই বলে যে, হয়ত কোন অসুবিদার কারনে আজ স্কুলে আসতে পারেনি, কাল নিশ্চয়ই আসবে। কিন্তু কাল শেষ দিন, যদি না আসে?
পরদিন অর্থাৎ শুক্রবার স্কুলে আমাদের শেষ দিন। সবাই সময় মত আমাদের ধার্য করা জায়গায় পৌছে যাই, কিন্তু...কিন্তু শাহনাজ, শাহনাজ কোথায়? শাহনাহজকে তো দেখি না!!
ঘন্টা খানিক অপেক্ষা করার পর পান্নাকে শাহনাজের বাসায় পাঠালাম খুজ নিতে।
পান্না ফিরে এসে কাওছারকে বকা দিতে শুরু করে দেখে আমি বুঝতে পারলাম খবর খারাপ। তাই পান্নাকে বললাম সব খুলে বলতে।
পান্নাঃ সরি টু সে...শাহনাজ গতকাল বিকালেই বাংলাদেশ চলে গেছে। আর এই সব এর জন্য দায়ী কাওছার গাদা। হয়ত ওই চিঠির মাঝে রয়েছিল ওর না বলা কথা, দেশে যাওয়ার কারন ইত্যাদি।
No comments:
Post a Comment