আমি সৌরভ, জন্ম বাংলাদেশে,বড় হয়েছি ইংল্যান্ডে। |
ছোট বেলা থেকেই খুব চঞ্চল স্বভাবের এবং জেদি ছিলাম,দুষ্টুমির সীমা ছিল না। খুব সাহসীও ছিলাম,কিন্তু আমি সাপ খুব ভয় পেতাম এবং এখনো পাই। আরেকটা মজার ব্যাপার হল আমি ইঞ্জেকশন,ট্যাবলেট,ক্যাপসুল ইত্যাদিকে ও সাপের মতো ভয় পেতাম এবং এখনো পাই। কিন্তু কথায় আছে না, যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয়। আমার বেলাও তাই হল। আমাদের পাশের বাড়ির বশির ছিল গ্যাস্ট্রিক আলচার রোগি,রাত ব্যথা ওঠলে বশির চিৎকার করে কাঁদিত। আমি একদিন মাকে জিজ্ঞেস করি মা,’ বশির চিৎকার করে কাঁদছে কেন? মা’ বললেন ওর খুব কষ্ট হচ্ছে, গ্যাস্ট্রিকের বেদনা সহ্য করতে পারছে না তাই চিৎকার করে কাঁদছে। আমি বললাম ওকি আমার মতো ঔষধ ভয় পায়? মা’ বলেন সে তোমার মতো ভিতু না,সে নিয়মিত ঔষধ খায়। আমি বলি,মা’তুমি না বল ঔষধ খেলে রোগ থাকে না!!! তাই আমাকে জোড় করে ঔষধ খাওয়াও আর আমি সুস্থ হয়ে যাই।কিন্তু মা’বশিরের কমছে না কেন? হো... আমি জানি কেন? ওর মা’ নেই তো তাই। মায়ের হাতে ঔষধ খেলে রোগ থাকে না,ঠিক না মা? কিন্তু আমার বশিরের জন্য কষ্ট হয় মা। তুমি একটা কিছু কর না যাতে ওর ব্যথা চলে যায়। মা’ বললেন দোয়া করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই বাবা,আমি দোয়া করি আল্লাহ যেন বশির কে মাফ করেন। রাত অনেক হয়েছে বাবা তুমি এখন ঘুমাও।আমি বলি মা,আমার জন্য ও দোয়া কর,আল্লাহ যেন আমাকে বশিরের মতো রোগ না দেন।মা’ আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেন, মা’ সন্তানের জন্য সব সময় দোয়া করে বাবা। মাকে বলতে হয় না। এবার তুমি ভালো ছেলের মতো ঘুমিয়ে পড় বাবা। তারপর আমি ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুমের ঘুরে আমি মা’ মা’ বলে ডাকছি শুনে মা’ আমাকে বুকে জড়িয়ে বলেন কি হয়েছে বাবা? আমি বলি,মা’ বশির...বশির মরে গেছে মা, বশির মরে গেছে। মা’ আমাকে বলে তুই দুঃস্বপ্ন দেখেছিস বাবা। বশিরের কিছুই হয় নাই। তুই ঘুমা। আমি আবার ঘুম'তে চেষ্টা করি, কিন্তু বশিরকে আমি চোখ থেকে সরাতে পারছি না। কিছুক্ষণ পর আবার আমার কানে কান্নার আওয়াজ আসে,আমি মাকে ডেকে বলি,মা’ তুমি কান্নার আওয়ার শুনতে পাচ্ছ? ওঠ মা’, আমার মনে হয় বশির মারা গেছে তাই ওর পরিবারের সবাই কাঁদছে। মা’ বলেন,আচ্ছা তুই ঘুমা বাবা,আমাকে খবর নিয়ে আসি।তারপর খবর নিয়ে জানা যায় বশির আমাদের মাঝে আর নেই। তখন থেকে গ্যাস্ট্রিক আলচার শুনলেই ভয় পেতাম,মনে করতাম গ্যাস্ট্রিক আলচার হলেই মানুষ মারা যায়। তাই সব সময় প্রার্থনা করতাম,খোদা কাউকে গ্যাস্ট্রিক -আলচার বা বেদনা রোগ দিওনা।
ইংল্যান্ড যাবার পর...
অবশেষে একদিন পি,ই ক্লাসে শাহনাজ ব্যাডমিন্টনে আমার পার্টনার হওয়ার সুযোগ পেয়ে গেল। আমি চ্যাঞ্জিং রুমে থাকতেই ওরা সব তাড়াতাড়ি করে ব্যাডমিন্টন কোর্টে চলে এসে নিজ নিজ পার্টনার বেছে নিয়ে খেলা শুরু করে দিছে।
আমি গিয়ে দেখি এক কোর্টে নেটের এক সাইডে শাহনাজ আর অপর সাইডে তার দুই বান্ধবী কি যেন বলাবলি করছে। আমাকে দেখেই ওরা চুপ হয়ে যায় এবং একজন বলে ওঠে, এইতো পেয়ে গেছি শাহনাজ তোর পার্টনার। চল খেলা শুরু করি। আমি চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখলাম আর কোন কোর্ট খালি নেই,এবং আমি যদি এখন ওদের সাথে না খেলি এতে ওরা অপমান বোধ করতে পারে। তাই শাহনাজ এর পার্টনার হয়ে খেলা শুরু করি। কিন্তু শাহনাজ এমন ভাব করছিল যেন সে জীবনে প্রথম বার রাকেট হাতে নিয়েছে। এইসব-ই- যে পরিকল্পিত আমি বুঝতে পেরেছিলাম,কিন্তু শাহনাজ এমন করছে কেন বুঝতে পারছি না!!! ও তো মোটামুটি ভালই খেলে। অপর সাইড থেকে ওর বান্ধবিরা বলছে সৌরভ শাহনাজকে একটু শিখিয়ে দেওনা......
আর অন্যদিকে আমার বন্ধু কাওছার আহমেদ পাশের কোর্ট থেকে মুচকি হাসি দিচ্ছেন,আর বলছে,সৌরভ বাজি খেলবে আজ??? আমি বলার আগেই শাহনাজ বলে দিচ্ছে হ্যাঁ, খেলব।
আমি শাহনাজকে বলি,তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে? নিজে রাকেট ধরতে জান না, বাজি খেলবে......
শাহনাজ বলছে তোমার লজ্জা করেন না, একজন তোমাকে চ্যালেঞ্জ করছে আর তুমি পিঠ দেখিয়ে পালাচ্ছ,ভিতু...
No comments:
Post a Comment